পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ প্রশাসনের ক্ষতি মোকাবিলায় নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুসমূহ

ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রবেশ করছে এবং এই মুহূর্তটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ (আ.লীগ) সরকারের শাসনামল নানা বিতর্ক, ব্যাপক অসন্তোষ এবং উল্লেখযোগ্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত ছিল। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে, যাতে দেশকে স্থিতিশীল করা যায়, জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধার করা যায় এবং একটি ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের পথ তৈরি করা যায়। নিচে উল্লেখিত অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলো অবিলম্বে সমাধান করা উচিত:

. আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। পূর্ববর্তী সরকার প্রায়ই বিরোধী মত ও বিরোধী দল দমন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহারের অভিযোগে সমালোচিত হয়েছিল, যা জনগণের আস্থা নষ্ট করেছে এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে আস্থা পুনর্নির্মাণ শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

. নির্বাচনী সংস্কার

বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আ.লীগ সরকারের অধীনে ভোটার দমন, কারচুপি এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগের কারণে। নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই একটি মুক্ত, সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ব্যাপক নির্বাচনী সংস্কার করতে হবে। এর মধ্যে ভোটার তালিকা পুনর্গঠন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী জালিয়াতি প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সংস্কারগুলোতে রাজনৈতিক সমস্ত অংশীদারদের সঙ্গে সংলাপ করা জরুরি।

. অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা

অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, যা আ.লীগ প্রশাসনের সময়কালীন অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে আরও খারাপ হয়েছে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং আর্থিক শাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো পুনরুজ্জীবিত করা, বিশেষত সেগুলো যেগুলোতে লক্ষ লক্ষ মানুষ কর্মসংস্থান পায়, অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলা করা এবং সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান করা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উদ্যোগগুলোর (এসএমই) প্রতি সহায়তা এবং দারিদ্র্য বিমোচনের উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আগের সরকারের অবহেলিত সবচেয়ে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সেবা প্রদানে উন্নতি করা জরুরি।

. দুর্নীতি উচ্ছেদ

দুর্নীতি ছিল পূর্ববর্তী সরকারের সময়কালীন ব্যাপক একটি সমস্যা, যেখানে জনসাধারণের অর্থের অপব্যবহার এবং দুর্নীতির অভিযোগ প্রচলিত ছিল। নতুন সরকারকে এই অভিযোগগুলোর ব্যাপক তদন্ত শুরু করতে হবে এবং দোষীদের রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বিবেচনা না করে দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি করতে হবে। দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা প্রয়োগ করা সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনগণের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।

. মতপ্রকাশ সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

আ.লীগ সরকারের অধীনে মতপ্রকাশ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্যভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল, যেখানে সাংবাদিক এবং সংবাদমাধ্যম প্রায়ই হয়রানি, হুমকি এবং সেন্সরশিপের সম্মুখীন হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই কঠোর আইনগুলোর বাতিল বা সংশোধন অগ্রাধিকার দিতে হবে, যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা একটি কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। একটি স্বাধীন ও প্রাণবন্ত সংবাদমাধ্যম সরকারকে জবাবদিহি করতে এবং জনগণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করতে সহায়ক।

. বিচারবিভাগের সংস্কার

পূর্ববর্তী প্রশাসনের সময় বিচারবিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, যেখানে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত নিয়োগ এবং বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ ছিল। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা আইনের শাসন এবং নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য অপরিহার্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিচারবিভাগকে অরাজনৈতিককরণ করতে হবে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাবিত মামলার ব্যাকলগ মোকাবিলা করতে হবে।

. মানবাধিকার সুরক্ষা

আ.লীগ সরকারের অধীনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ করে রাজনৈতিক দমন, গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এই নিপীড়নগুলোর তদন্ত ও প্রতিকার অগ্রাধিকার দিতে হবে। এছাড়াও, সংখ্যালঘু ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে হবে, যাতে সমস্ত নাগরিক আইনের অধীনে সমানভাবে আচরণ পায়। মানবাধিকার রক্ষা করা শুধুমাত্র একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, বরং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

. সামাজিক ন্যায়বিচার সমতা

পূর্ববর্তী প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতিগুলো প্রায়ই বৈষম্য বাড়িয়েছে, বিশেষ করে শহর ও গ্রামের মধ্যে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এমন নীতিগুলোর উপর মনোযোগ দিতে হবে, যা সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা প্রচার করে এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোকে সম্পদ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সুযোগ প্রাপ্তির সুযোগ প্রদান করে। এই বৈষম্যগুলো মোকাবিলা করা সামাজিক সম্প্রীতি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

. প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা

পূর্ববর্তী আ.লীগ সরকারের অধীনে perceived দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং পক্ষপাতিত্বের কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে জনগণের আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনগণের সেবার প্রতি অঙ্গীকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুশীল সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাদের সরকারে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এজেন্ডার শীর্ষে জনগণের স্বার্থের সেবা করা এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ নিশ্চিত করা উচিত।

১০. কূটনৈতিক পুনস্থাপন

পূর্ববর্তী প্রশাসনের বৈদেশিক নীতিতে প্রায়ই কিছু আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে অতিরিক্ত সামঞ্জস্য করার অভিযোগ উঠেছে, যা জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক পুনঃমূল্যায়ন করা উচিত, সার্বভৌমত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বগুলোকে পারস্পরিক সুবিধাজনকভাবে নিশ্চিত করা উচিত। জাতীয় স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বড় বৈশ্বিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা একটি সূক্ষ্ম তবে প্রয়োজনীয় কাজ হবে।

১১. নিরাপত্তা বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থার সংস্কার

আ.লীগ সরকারের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রায়ই রাজনৈতিক দমনের হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং সততা পুনরুদ্ধার করতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিম্নলিখিত সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে:

অরাজনৈতিকীকরণ: প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত বাহিনীগুলোকে অরাজনৈতিককরণ করা। যারা রাজনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন তাদের সরিয়ে দেওয়া উচিত এবং পদোন্নতি মেধা ও সেবার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে নয়।

প্রশিক্ষণ আচরণবিধি: আইন, মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালা মেনে চলার উপর জোর দিয়ে প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো পুনর্গঠন করা জরুরি। একটি নতুন আচরণবিধি প্রয়োগ করা উচিত যাতে তাদের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।

নজরদারি ব্যবস্থা: নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম মনিটর করার জন্য স্বাধীন নজরদারি সংস্থাগুলো গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার তদন্ত এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সুপারিশ করার ক্ষমতা দেওয়া উচিত।

১২. শিক্ষাক্রম পাঠ্যসূচি পর্যালোচনা

আ.লীগ সরকারের সময়ে জাতীয় শিক্ষাক্রমে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা প্রায়ই রাজনৈতিক এবং আদর্শগত প্রভাব দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো অগ্রাধিকার দিতে হবে:

শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা: বিদ্যমান শিক্ষাক্রমের অবিলম্বে পর্যালোচনা প্রয়োজন, যাতে এমন বিষয়বস্তু চিহ্নিত ও অপসারণ করা যায় যা পক্ষপাতমূলক আদর্শ প্রচার করে বা ইতিহাসকে বিকৃত করে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা, জাতীয় ঐক্য এবং ইতিহাসের সঠিক বোঝাপড়া তৈরি করার লক্ষ্য হওয়া উচিত।

অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা: শিক্ষাক্রমে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় পরিবেশ প্রতিফলিত হওয়া উচিত, যা সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রতি সহনশীলতা এবং সম্মানের প্রচার করে।

দক্ষতা উন্নয়ন: পাঠ্যসূচিতে বৃত্তিমূলক এবং প্রযুক্তিগত শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা আধুনিক কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারে।

১৩. সংবিধানের পুনঃমূল্যায়ন পুনর্লিখন

আ.লীগ সরকার সংবিধানে বেশ কয়েকটি সংশোধনী করেছে, যেগুলো প্রায়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলোকে দুর্বল করার এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই:

সংবিধান পুনঃমূল্যায়ন কমিশন: একটি অরাজনৈতিক কমিশন গঠন করা উচিত, যেখানে আইন বিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজের সদস্য এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যাতে গত দশকে গৃহীত সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করা যায়।

নিয়ন্ত্রণ ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা: বিচারবিভাগের স্বাধীনতা দুর্বল করার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সংকুচিত করার বা নির্বাহী ক্ষমতা বৃদ্ধির সংশোধনীগুলো বাতিল করা উচিত। লক্ষ্য হওয়া উচিত সংবিধানের মূল চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, যা সরকারের শাখাগুলোর মধ্যে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে।

জনগণের গণভোট: প্রধান সংবিধানিক পরিবর্তনগুলো জনগণের গণভোটের মাধ্যমে করা উচিত, যাতে সেগুলো জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটে।

১৪. ক্ষতিকারক আইন চুক্তি বাতিল

পূর্ববর্তী সরকার বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেছে এবং চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যা জাতীয় স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে গণ্য হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে:

আইনি পর্যালোচনা: আ.লীগের শাসনামলে পাস হওয়া সমস্ত আইন, বিশেষ করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত আইনগুলোতে একটি ব্যাপক পর্যালোচনা করা উচিত। যেসব আইন অত্যাচারী বা অন্যায় বলে প্রমাণিত হবে, সেগুলো অবিলম্বে বাতিল করা উচিত।

দ্বিপাক্ষিক চুক্তি: ভারতের সঙ্গে সমস্ত চুক্তির পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত, বিশেষ করে যেগুলো জাতীয় সার্বভৌমত্ব বা অর্থনৈতিক স্বার্থের ক্ষতি করে বলে বিবেচিত হয়েছে। যে চুক্তিগুলো বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেগুলো পুনরায় আলোচনার জন্য বা বাতিল করার জন্য বিবেচনা করা উচিত।

১৫. ছাত্র রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারী

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাবাধীন ছাত্র রাজনীতি প্রায়ই সহিংসতা, দুর্নীতি এবং শিক্ষাগত ব্যাঘাতের উৎস হয়ে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিম্নের বিসয়সমুহ খেয়াল রাখতে হবেঃ

ছাত্র রাজনীতির নিষেধাজ্ঞা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকল ধরনের সংগঠিত ছাত্র রাজনীতি অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত। এই স্থগিতাদেশটি নতুন একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত বহাল থাকা উচিত, যা নিশ্চিত করে যে ছাত্র সংগঠনগুলো রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্তভাবে পরিচালিত হবে।

শিক্ষাগত উৎকর্ষতা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই শিক্ষাগত উৎকর্ষতা এবং গবেষণার উপর গুরুত্ব দিতে হবে, যা পক্ষপাতদুষ্ট রাজনীতির প্রভাবমুক্ত। পরে ছাত্র ইউনিয়নগুলো পুনঃপ্রবর্তন করা যেতে পারে, তবে সেগুলোকে অবশ্যই কঠোরভাবে অরাজনৈতিক এবং শিক্ষার্থীদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বকারী হতে হবে, রাজনৈতিক এজেন্ডার নয়।

উপসংহার

বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি নবায়নের সুযোগও রয়েছে। এই অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুগুলোকে দৃঢ়তা এবং সততার সাথে সমাধান করার মাধ্যমে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি স্থিতিশীল, ন্যায়বিচারপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এই পরিবর্তনকালীন সময়ের সাফল্য সরকারের সক্রিয়তা, আইনের শাসন বজায় রাখা এবং জাতীয় প্রতিষ্ঠানে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে। শুধুমাত্র তখনই বাংলাদেশ অতীতের ক্ষতি থেকে এগিয়ে যেতে পারবে এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।


Leave a comment