ব্রি; জেঃ এইচ আর এম রোকন উদ্দিন, পি এস সি, পি এইচ ডি।
বাংলাদেশ—এই নামটি কেবল একটি ভৌগোলিক সীমানার নাম নয়, এটি একটি আত্মত্যাগ, একটি রক্তস্নাত ইতিহাস, একটি গৌরবময় পরিচয়ের প্রতীক। ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আজ শুধু কাগজে লেখা কোনো দলিল নয়—এটি আমাদের আত্মমর্যাদা, আমাদের জাতীয় চেতনা, এবং আমাদের অটুট সংগ্রামী ঐতিহ্য।
কিন্তু আজ, ২০২৫ সালে এসে আমরা আবার এক গভীর সংকটের মুখোমুখি। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র, দেশবিরোধী দালাল, এবং পরাশক্তির এজেন্টরা বিভিন্ন রূপে, নানা মুখোশ পরে জাতির ভিত নাড়িয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে। এদের কেউ মিডিয়া মারফত, কেউ প্রশাসনের ভিতরে, কেউ তথাকথিত সুশীল সমাজের লেবাসে, কেউ আবার ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে কিংবা মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে দেশকে পরাধীনতার পথে ঠেলে দিচ্ছে।
ভারতের আধিপত্যবাদ ও দেশীয় দালালদের ষড়যন্ত্র এখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতের জন্য এক গভীর হুমকিতে পরিণত হয়েছে। এ কেবল একটি কূটনৈতিক সমস্যা নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক আগ্রাসন—যার লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে একটি নির্ভরশীল, দুর্বল এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য রাষ্ট্রে পরিণত করা।
ভারতের একতরফা নীতি ও বাংলাদেশবিরোধী অবস্থান
ভারতের বর্তমান শাসক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আরোপই তাদের কৌশলগত লক্ষ্য। বাংলাদেশ হচ্ছে তাদের এই নীতির প্রথম শিকার:
পানি চুক্তি: তিস্তা চুক্তি বছরের পর বছর ঝুলে আছে, অথচ ভারত অভ্যন্তরীণ নদীগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ করে একতরফাভাবে বাংলাদেশের কৃষি ও জীবিকা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করছে। ফারাক্কা, গজলডোবা, টিপাইমুখ—প্রতিটি প্রকল্পে বাংলাদেশ উপেক্ষিত।
সীমান্ত হত্যা: প্রতি বছর ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (BSF) কর্তৃক শতাধিক বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়। বিশ্বে এমন আর কোনো প্রতিবেশী নেই যারা এত নিয়মিতভাবে সীমান্তে হত্যা করে এবং দায়মুক্তি পায়।
বাণিজ্য বৈষম্য: ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশে নানা শুল্ক ও অশুল্ক বাধা থাকলেও, ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের বাজারে সহজে প্রবেশ করে। এর ফলে দেশীয় শিল্প ও কৃষি খাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ: ২০০৮ সাল থেকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW সরাসরি বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া, রাজনৈতিক প্রকৌশল এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। নির্বাচনে প্রভাব, মিডিয়া পরিচালনা, এনজিও ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মতামত গঠন—এসবই ভারতের নিয়ন্ত্রণের অংশ।
দেশীয় দালালদের ভূমিকা
এই আগ্রাসী নীতিকে বাস্তবায়ন করতে ভারতের দরকার পড়েছে দেশের ভেতরেই কিছু “ভদ্রলোক মুখোশধারী” দালাল ও বিশ্বাসঘাতকের। এরা বিভিন্ন রূপে সক্রিয়:
মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণি: কিছু কথিত বিশ্লেষক, কলামিস্ট ও টকশো বক্তা ভারতের স্বার্থকে নিরপেক্ষ মতামতের ছদ্মবেশে উপস্থাপন করে জনমত প্রভাবিত করছে। “ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছাড়া উপায় নেই”, “আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য ভারত দরকার”—এমন বক্তব্যের মাধ্যমে জাতীয় আত্মবিশ্বাস ধ্বংস করা হচ্ছে।
এনজিও ও সুশীল সমাজ: ভারতের প্রভাবাধীন কিছু এনজিও—মানবাধিকার, উন্নয়ন বা নারী অধিকার ইস্যুর নামে—দেশের ভেতরে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে হস্তক্ষেপ করছে। এইসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি ফান্ডের মাধ্যমে দেশে তথাকথিত ‘সভ্যতা রক্ষা’র নামে আদর্শিক উপনিবেশ গড়ে তুলছে।
ইতিহাস বিকৃতি ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ: পাঠ্যপুস্তক, গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের অনুসারী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীন পরিচয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, ইসলামী মূল্যবোধ—সবকিছুর ওপর হামলা চালিয়ে জাতিগত আত্মপরিচয় ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে।
লক্ষ্য: বাংলাদেশকে দুর্বল রাখা
এই দালালচক্রের মূল উদ্দেশ্য— সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার মনোবল নষ্ট করে স্বাধীনতাকামী রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করা,গণতান্ত্রিক ও মুক্তচিন্তার পরিবর্তে অনুগত, দমনমূলক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে জনগণকে নিয়ন্ত্রণে রাখা, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিরক্ষা ও অর্থনীতিকে ভারতের স্বার্থানুযায়ী পরিচালিত করা।
এটি শুধুমাত্র ষড়যন্ত্র নয়—এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ।
করণীয়:
জনগণকে সচেতন করতে হবে—যে স্বাধীনতা পুনরায় হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, মিডিয়া ও একাডেমিয়ায় ভারতের দালালদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে, নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল বৃদ্ধি ও পেশাদারিত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গঠন জরুরি, কূটনৈতিকভাবে ভারতকে কঠোর বার্তা দিতে হবে—বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র, পরাধীন উপনিবেশ নয়।
ইতিহাস সাক্ষী, যারা ভারতের চক্রান্তে জাতিকে বিক্রি করেছে, তারা কখনো টিকতে পারেনি। সেই ইতিহাস পুনরাবৃত্তি করতে দেওয়া যাবে না। এখনই সময়, জাতি হিসেবে জেগে ওঠার, আত্মমর্যাদা রক্ষার, এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাধীন ও সম্মানিত বাংলাদেশ গড়ে তোলার। বাংলাদেশ থাকবে স্বাধীন, থাকবে মর্যাদাশীল—কারো গোলামি করে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে! বিজয় আমাদের হবেই!
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও জাতীয় নিরাপত্তা
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেবল একটি সশস্ত্র বাহিনী নয়—এটি জাতির সম্মান, গৌরব এবং অস্তিত্ব রক্ষার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। এই বাহিনী দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরসূরি। যারা এই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, তাদের উত্তরাধিকার রক্ষা করাই এ বাহিনীর নৈতিক দায়িত্ব। অতএব, এই সেনাবাহিনী কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হতে পারে না—এটি একটি সংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, যার প্রতি রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের আস্থা রাখা উচিত।
সেনাবাহিনীর মূল দায়িত্ব হলো:
দেশের সার্বভৌম সীমান্ত রক্ষা করা। বিদেশি হুমকি ও আগ্রাসন প্রতিহত করা। অভ্যন্তরীণ সংকটকালীন সময়ে সরকারকে সহায়তা প্রদান করা। দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের মুহূর্তে জনগণের পাশে দাঁড়ানো। জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা। এই সমস্ত কার্যক্রমে সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা, পেশাদারিত্ব ও আত্মত্যাগের উদাহরণ বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা চক্রান্তকারী মহল সময়-সময়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছে—মিথ্যা প্রচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অযৌক্তিক সমালোচনার মাধ্যমে। এই ধরনের আচরণ কেবল সেনাবাহিনী নয়, গোটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকেই দুর্বল করে।
জাতির শত্রুরা সবসময় জানে—একটি শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং মর্যাদাসম্পন্ন সেনাবাহিনী থাকলে বাংলাদেশকে কখনোই পরাজিত করা যাবে না। তাই তাদের প্রথম লক্ষ্য হয় সেনাবাহিনীর উপর আঘাত হানা—মনোবল ভাঙা, বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, বাহিনীর মধ্যে ভেদ সঞ্চার করা। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। তারা জানে—সেনাবাহিনী কারো ব্যক্তিগত সম্পদ নয়, এটি জাতির প্রতিরক্ষার প্রাচীর। এজন্য আজ আমাদের করণীয়: সেনাবাহিনীকে রাজনীতি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা। বাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। সেনাবাহিনীর পেশাগত শৃঙ্খলা ও মনোবল রক্ষায় জনসমর্থন জোরদার করা। সেনাবাহিনীকে যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত রাখা।
স্মরণে রাখা জরুরি—বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় যদি শেষ আশ্রয় কোথাও থাকে, তবে তা আমাদের সেনাবাহিনী। এই বাহিনী দুর্বল হলে দুর্বল হবে রাষ্ট্র, আর রাষ্ট্র দুর্বল হলে নিশ্চিহ্ন হবে জাতির ভবিষ্যৎ। তাই, সেনাবাহিনীর মর্যাদা রক্ষা করা মানে আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষা করা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গর্বের, নির্ভরতার এবং প্রতিরক্ষার প্রতীক—এটি আমাদের, আমাদেরই থাকবে। কেউ যেন এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে, সেই নজরদারি আমাদেরই রাখতে হবে।
সাম্প্রতিক সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে—একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কিছু মিডিয়া হাউজ, ইউটিউব চ্যানেল, কথিত বক্তা এবং কথিত বিশ্লেষক সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন ঘটনার আড়ালে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো জনসমক্ষে টেনে আনছে, বিভ্রান্তিকর ও বিকৃত তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা দুর্বল করার চেষ্টা করছে। এটা নিছক সমালোচনা নয়—এটি এক প্রকার মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ (PSYOPS), যার লক্ষ্য হচ্ছে সেনাবাহিনীকে বিভ্রান্ত, বিভক্ত এবং দুর্বল করা।
এই অপতৎপরতায় জড়িত ব্যক্তিরা হয়তো নিজেরাও জানে না—তারা দেশের শত্রুদের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আবার কেউ কেউ সচেতনভাবেই দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও একমাত্র অবশিষ্ট রাষ্ট্রীয় শক্তিকে টার্গেট করছে। তাদের এ অপচেষ্টা কেবল সেনাবাহিনী নয়, গোটা রাষ্ট্রের স্থিতি ও ভবিষ্যতের ওপর আঘাত হানে। কারণ যে রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মনোবল ভেঙে ফেলা হয়, সেই রাষ্ট্র চিরতরে পরনির্ভরশীল, দুর্বল ও অরক্ষিত হয়ে পড়ে।
একটি বিষয়ে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে—এই বাহিনী কারো ব্যক্তিগত মালিকানায় নয়, এটি জাতির। এখানে যারা সেবা দেয়, তারা একদিন অবসর নেন, চলে যান, কিন্তু বাহিনী থাকে—জাতির অংশ হয়ে। অতএব, সেনাবাহিনীর সম্মান নষ্ট করার মানে জাতির মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা। যে সমস্ত বক্তা, সাংবাদিক, বা ইউটিউবার সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে অপব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তাদের মনে রাখা উচিত—এটি কোনো টকশোর বিষয় নয়; এটি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব এখন—এই অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের আওতায় তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। কারণ সেনাবাহিনী দুর্বল হলে রাষ্ট্রের ভিত নড়ে যায়। এখন সময় সতর্ক হওয়ার, দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত হওয়ার। জনগণের উচিত সেনাবাহিনীর পাশে দাঁড়ানো, অপপ্রচারের জবাব দেওয়া। কারণ এই বাহিনী শুধু বন্দুক বহন করে না, তারা আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অংশ, আমাদের সম্মানের প্রতীক। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে ভালবাসি, গর্ব করি। কেউ যদি সেই সম্মানে আঘাত করে, তাকে প্রতিরোধ করাও দেশপ্রেমিক নাগরিকের দায়িত্ব। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থাকবে অটুট—রাষ্ট্রের জন্য, জাতির জন্য, ভবিষ্যতের জন্য।
বাংলাদেশের জনগণ জেগে উঠেছে
বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জনগণ প্রমাণ করেছে—তারা আর চুপ করে থাকবে না। এই দেশের মানুষ দেশপ্রেমিক, সাহসী ও আত্মত্যাগে বিশ্বাসী। তারা কারো গোলামি করে না, বরং দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত।
আজ আমাদের সামনে দু’টি পথ—
১. বাংলাদেশকেন্দ্রিক, স্বনির্ভর, স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ পথ
২. দালালি, বিদেশি গোলামি, পরাধীনতার কলঙ্কিত পথ
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরের নানা ষড়যন্ত্র, অপশাসন, বিশ্বাসঘাতকতা এবং দুর্বল রাষ্ট্র পরিচালনার কারণে জাতি আজ ক্লান্ত, ক্ষুব্ধ এবং আশাহীন অবস্থার কাছাকাছি পৌঁছেছে। কিন্তু এখনই সময়—নতুনভাবে পথ নির্ধারণ করার, এখনই সময় জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি সাহসী ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
জনগণের কাছে এখন আহ্বান খুব স্পষ্ট:
১. ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে: দেশে-বিদেশে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সংস্কৃতি ও স্বার্থের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে, তাদের সামনে আনতে হবে। তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, এই জাতির স্বার্থবিরোধী তৎপরতা আর সহ্য করা হবে না। সোশ্যাল মিডিয়া, বিদেশি তহবিলচালিত এনজিও, কথিত বিশ্লেষক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব—যারা পর্দার আড়ালে দেশের বিরুদ্ধে নাশকতা চালাচ্ছে, তাদের আসল পরিচয় সামনে আনা হবে।
২. ভারতের স্বার্থে নিযুক্ত দালালদের বিচারের আওতায় আনতে হবে: যারা ভারতের হয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেছে, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছে, সীমান্ত হত্যা ও পানিচুক্তি নিয়ে নীরব থেকেছে, এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ দেশ কারো গোলামির জন্য নয়।
৩. সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থার প্রতি সর্বোচ্চ আস্থা ও শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে: এই বাহিনীই আজ দেশের অস্তিত্ব রক্ষায় নিয়োজিত। সেনাবাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি অবিশ্বাস বা বিদ্বেষ ছড়ানো মানে জাতির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করা। সমালোচনা থাকতেই পারে, কিন্তু তা হতে হবে গঠনমূলক, সম্মানজনক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভেতরে থেকে। বাহিনীর মনোবল ভাঙার চেষ্টা করলে তা হবে শত্রুর কাজ।
৪. অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে: মিডিয়া, ইউটিউব, ফেসবুক লাইভ—এসব আজ হয়ে উঠেছে বিভ্রান্তি ও মিথ্যাচারের বড় মাধ্যম। নাগরিকদের সচেতন হতে হবে, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ব্যক্তিদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। সাইবার স্পেসে সত্য ও সুস্থ ধারার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
৫. “বাংলাদেশ ফার্স্ট” নীতিকে জাতীয় দর্শন হিসেবে গ্রহণ করতে হবে: রাজনীতি, অর্থনীতি, কূটনীতি—সবকিছুতেই “সবার আগে বাংলাদেশ”—এই নীতি অনুসরণ করতে হবে। দল, গোষ্ঠী, মতবাদ, বিদেশি মিত্র—সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখতে হবে জাতীয় স্বার্থকে।
এটাই এখন সময়—মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াইয়ের, পরাধীনতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার সংগ্রামের, দালালি ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রতিরোধ গড়ার। বাংলাদেশ কারো করুণা বা চক্রান্তে গড়া দেশ নয়—এটি গড়া হয়েছে রক্ত দিয়ে, বিশ্বাস দিয়ে, সাহস দিয়ে। তাই এর রক্ষা ও পুনর্গঠনের দায়িত্বও আমাদেরই নিতে হবে। এই যাত্রা কঠিন, তবে সম্মানের। শত্রু যতই শক্তিশালী হোক, ঐক্যবদ্ধ জাতির বিরুদ্ধে তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হবে না। “বাংলাদেশ ফার্স্ট”—এই হোক আমাদের শপথ।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি
ভুলে গেলে চলবে না—এদেশে রাজাকার, পাকিস্তানের দোসর কিংবা ক্ষমতালোভী বিশ্বাসঘাতক—কেউই শেষ রক্ষা করতে পারেনি। যারা দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, ইতিহাস তাদের বিচার করেছে। এইবারও করবে, ইনশাআল্লাহ। রক্তে কেনা স্বাধীনতা, আত্মমর্যাদার বাংলাদেশ
বাংলাদেশ কারো করুণার ওপর টিকে নেই। এই দেশ দাঁড়িয়ে আছে এক সাগর রক্ত, এক মহাসাগর ত্যাগ আর আত্মত্যাগের উপর। যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা ভুলে না যাক—বাংলাদেশের জনগণ এখন চোখে চোখ রেখে কথা বলে, আত্মমর্যাদার পতাকা উঁচু করে ধরে। বাংলাদেশ থাকবে মাথা উঁচু করে—স্বাধীন, মর্যাদাসম্পন্ন ও অপ্রতিরোধ্য। দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রতিটি নাগরিক আজ সদা প্রস্তুত। যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে, আমরা রুখে দাঁড়াবো—আমরা হারবো না, বাংলাদেশ হারবে না।